পটভূমিঃ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মূলতঃ ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের একটি বড় অংশ যা পূর্বে পশ্চিম ভানুগাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। এ উদ্যান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ৫ নং কমলগঞ্জ ও মাধবপুর ইউনিয়ন এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। ১৯৯৬ সালে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বনকে সরকার ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ‘বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষিন বিভাগ’ সিলেটের উপর ন্যাস্ত হয়। এ উদ্যান ঢাকা শহর থেকে প্রায় ১৯৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং ২৪০৩০’ -২৪০৩২’(উঃ) অক্ষাংশ ও ৯১০৩৭’ -৯১০৪৭’ (পূর্ব) দ্রঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ উদ্যানের ভিতর দুটি খাসিয়াপুঞ্জিসহ পাশ ঘেষে ৬টি টি-এস্টেট/চা বাগান এবং আশে-পাশে ৩০টি গ্রাম রয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর হতে এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।
লাউয়াছড়ার এ উদ্যানটি সিলেটের পাহাড়ী বনকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটা মূলতঃ চিরহরিৎ ও মিশ্রচিরহরিৎ বন। লাউয়াছড়া উদ্যান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত এলাকায় ছয় প্রকার ভূমির ব্যবহার সনাক্ত করা যায়। যেমন: ১) উচ্চ বনভূমি যার অধিকাংশ প্রাকৃতিক বনের অংশ, ২) একক বা মিশ্র প্রজাতির সৃজিত বন, ৩) তৃণভূমি ও বাঁশবন, ৪) জলাভূমি, ৫) চা বাগান, ৬) চাষাবাদযোগ্য জমি। এ উদ্যান জুড়ে রয়েছে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হওয়া বেশ ক্ষুদ্র জলপ্রবাহ, আঞ্চলিকভাবে যা ‘ছড়া’ নামে পরিচিত।
১২৫০ হেক্টরের এ জাতীয় উদ্যান দক্ষিণ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে বিস্তৃত উত্তরে চাউতলী ও কালাছড়া বন বিট; উত্তর-পূর্ব কোনে বালিগাঁও ও বাগমারা; পূর্বে ফুলবাড়ী চা-বাগান, লঙ্গুরপাড়, ভাষানীগাঁও; পশ্চিমে ভাড়াউড়া চা বাগান, উত্তর-পশ্চিমে গোরোবস্থি ও ঘিলাছড়া চা বাগান এবং দক্ষিণে ডলূবাড়ি ও রাধানগর এ জাতীয় উদ্যানের সীমানা।
সংলগ্ন গ্রামসমূহ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ল্যান্ডস্কেপ এলাকায় মূলতঃ কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এ দু’টি উপজেলার সীমানায় বিস্তৃত। উপজেলা ভিত্তিক অন্তর্ভূক্ত গ্রামগুলো হলঃ
কমলগঞ্জ উপজেলাঃ
কালাছড়া, সরইবাড়ি, বাদেউবাহাটা, বনগাঁও, রাসটিলা, ভেড়াছড়া, ছাতকছড়া, বাঘমারা, উঃ বালিাগাঁও, বাল্লারপাড়, ফুলবাড়ি (চা বাগান), মাগুরছড়াপুঞ্জি, লঙ্গুরপাড়, টিলাগাঁও, ভাষানীগাঁও, নুরজাহান চা বাগান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলাঃ
দিলবরনগর, রাধানগর, ডলাছড়া, বিরাইমপুর বস্থি, ভাড়াউরাবস্থি, জাগছড়া, খাইছড়া, সোনাছড়া, গারোবস্থি, কালাপুর, লামুয়া, সিরাজনগর, লাউয়াছড়াপুঞ্জি।
রক্ষিত এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণীঃ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সেগুন, চাপালিশ, আগর, রক্তন সহ মোট ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিত, ০৪ প্রকার উভচর প্রাণী, ০৬ প্রজাতির সরিসৃপ ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী উল্লুকের বাসস্থান হিসেবে এই বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এ বনে রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, মায়া হরিণ, মজগরসহ নানা প্রকার জীবজন্তু। উদ্যানের পাখির মধ্যে রয়েছে সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, তুর্কিবাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল, ধূসর সাতশৈলী, পেঁচা, ফিঙে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালোমাথা বুলবুল, ধুমকল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।
রক্ষিত এলাকার বিশেষত্বঃ
§ বাংলাদেশের একমাত্র জীবিত আফ্রিকান টিকওক গাছটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আছে।
§ পৃথিবীর মাত্র চারটি দেশে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেই সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় এই
উল্লুক দেখা যায়।
§ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বনরুই, অজগর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সহ প্রায় ২৭৬ প্রজাতির বন্যপ্রাণী আছে।
§ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাসিয়াপুঞ্জি, যারা ধারন করে আছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও
ঐতিহ্য ।
§ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর রয়েছে এক, দেড় ও তিন ঘন্টার তিনটি ট্রেইল, যেখানে পর্যটকরা প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে
উপভোগ করতে পারে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস